রহস্যময় ভয়নিখের পান্ডুলিপি | Mysterious Voynich Manuscript

The Voynich Manuscript

রহস্যের প্রতি মানুষের আগ্রহের সীমা, কখনোই ছিল না। সেই সৃষ্টির আদিকাল থেকে শুরু করে মানুষ ছুটেছে রহস্যের পেছনে। সৃষ্টির শুরু থেকেই সকল কিছু ছিল রহস্যে ঘেরা, আস্তে আস্তে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেয়েছে, উন্নত হয়েছে মানুষের চিন্তা ধারণা আর মানুষ খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছে সেই সমস্ত রহস্যগুলো।



পৃথিবীতে যত রহস্যময় বস্তু আছে তার মধ্যে ভয়নিখের পান্ডুলিপি (Voynich Manuscript) অন্যতম। ভয়নিখের পান্ডলিপি পাওয়া যায় প্রায় আজ থেকে ৮৫ বছর আগে। ভয়নিখ ছিলেন এক পুরনো বই ব্যবসায়ী, তার নেশা আর পেশা সব কিছুই ছিল পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা আর সময় মত সেগুলোকে চড়া দামে বিক্রি করা। এখানেই পুরনো বইয়ের মধ্যে থেকে ভয়নিক পেয়েজান অদ্ভুদ পান্ডুলিপিটি। তাৎক্ষণিক তিনি বুঝতে পারেনি যে এটা এত আলোচনার বিষয় হবে, বিক্রি করে দিলেন কিছু না বুঝেই। যখন হাতছাড়া হয়ে গেছে তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে এটার আসল মূল্য কি, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। রাগে দুঃখে তখন তার মাথার চুল ছেড়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তবে ভয়নিকের লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে একটাই, পাণ্ডুলিপিটির সাথে তার নাম চিরদিনের জন্য জড়িয়ে গেছে রহস্যের খাতায়।



রহস্যময় পান্ডুলিপিটি নিয়ে এত গবেষণা হয়েছে যা বলার মতো না কিন্তু এত গবেষণা করেও এর মূল রহস্য আজ পর্যন্ত কেউ বের করতে পারেনি। সম্ভব হয়নি এর মূল রহস্য উদ্ধার করার কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে নানা গুজব। প্রচলিত অনেক গুজবের মধ্যে কিছু গুজব এমন ছিল যে, পান্ডুলিপিটি সেই সব লোকদের যারা বিভিন্ন মাধ্যমে সোঁনা তৈরির চেষ্টা করতেন আবার কেউ কেউ মনে করতেন পান্ডুলিপিতে জ্যোতিষবিদ্যার কথা লেখা হয়েছে আবার মহাকাশ বিদ্যার গোপন রহস্য এই পান্ডুলিপিতে আছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। আবার একদল মনে করেন পৃথিবী তৈরির গুপ্ত কথাও এই পান্ডুলিপিতে লেখা আছে। কিছুকিছু লোক মনে করেন এই পান্ডুলিপিতে নাকি আত্মা, মৃত্যু ও তার পরের কথা বলা হয়েছে আর এখানে লেখা আছে কিভাবে আত্মাকে ডেকে আনতে হয় তার পুরো গোপন প্রক্রিয়া।



রহস্য আরো ঘণভূত হলো যখন গবেষণার পর জানা গেল যে, পান্ডুলিপিটি মোটামুটি ৭০ দশকের বিখ্যাত মধ্যযুগি ইংরেজ রওজার ব্যাকনের (Roger Bacon)। ব্যাকন নিজেই ছিল এক রহস্যময় ব্যক্তি আর তিনি নিজে অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছেন। মধ্যযুগের এই পন্ডিত নাড়াচাড়া করেনি এমন কোন শাখা নেই। পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ভৌত বিজ্ঞানের শাখা সহ বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি মাথা ঘামাননি। বিজ্ঞানের বর্তমান আবিস্কার তিনি তার ৭০ দশকেই লিখে দিয়ে গেছেন। তার লেখা বইয়ের অনেক কিছুই পরবর্তীকালে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে, আবার অনেক ভবিষ্যতবাণী একদম হুবহু মিলে গেছে।



তিনি যে আত্মার সাথে কথা বলতেন এবং তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের কথা শুনতেন একথা নাকি সমসাময়িক অনেকের লেখায় ও প্রকাশিত হয়েছে।



ভয়নিখের-একটি-পাতা, voynich-manuscript-pages

নানা রকম বিশ্ময়কর ক্ষমতার অধিকারী রওজার ব্যাকনের পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে এমন কথা শুনে নড়েচড়ে বসেছিলেন অনেক গবেষকেরা কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তারা এখন পর্যন্ত এর ভিতরের এক অক্ষর ও বুঝতে পারেননি, কেননা পাণ্ডুলিপিতে ব্যবহার করা হয়নি এরকম কোন বিষয়-ই নেই কারণ পান্ডুলিপিটিতে সংখ্যা, ফুল, জ্যামিতিক নকশা গ্রহের ছবি ইত্যাদি থেকে শুরু করে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান চিকিৎসা শাস্ত্রের এমন কোন বিষয় নেই যেটা ওই পান্ডুলিপিটিতে এঁকে এবং লিখে যাননি।

ভয়নিখের এই পান্ডুলিপি নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয়েছে তার মধ্যে একটি জিনিস উঠে আসে আর সেটা হচ্ছে এতে বিভিন্ন জিনিসের উপর বিক্ষিপ্ত কিছু কথা ও আধ্যাত্মিক জটিল কিছু সংকেত রয়েছে যেটার কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারেননি কিন্তু অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পেরেছেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এই যুগে এতসব প্রযুক্তি থাকা সত্বেও কেউ বের করতে পারেনি ভয়নিখের এই পান্ডুলিপির আসল রহস্য, আর কি লেখা আছে সেই রহস্যময় পান্ডুলিপিতে তা তো এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি তবে আমরা আশা করছি খুব অচিরেই এর আসল রহস্য আমাদের সামনে আসবে।

আমাদের আজকের রহস্য আপনার কেমন লাগলো তা আমাদের অবশ্যই জানাবেন আর এই পোষ্ট নিয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে তা আমাদের অবশ্যই জানাবেন, ধন্যবাদ।


No comments:

Powered by Blogger.