সম্পূর্ণ গুজব মরণ ফাঁদ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল | Bermuda Triangle Complete Rumor
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা (Florida), পুয়ের্তো রিকো (Puerto Rico) এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বারমুডা (Bermuda) এই তিনটি স্থানের মধ্যবর্তী কাল্পনিক ত্রিভুজাকার এলাকা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle) নামে পরিচিত।
বহু জাহাজ ও বিমান এই অঞ্চলে অলৌকিক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই একে শয়তানের ত্রিভুজ (Devils Triangle) নামেও ডাকে। ধারণা করা হয় এ অঞ্চলে এমন কোন অতিপ্রাক্রিতিক বিষয় আছে যার ফলে এখানে পৌছামাত্র জাহাজ বা বিমানগুলো নিখোঁজ হয়ে যায় কিন্তু বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ এর মাধ্যমে বারমুডা ট্রাঙ্গেল (Bermuda Triangle) এলাকায় এমন কোন বিষয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বারমুডা্ ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় ঘটা অলৌকিক ঘটনা সম্পর্কে প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায় নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস (Christopher Columbus) এর কাছ থেকে, এরপর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা ম্যাগাজিন ও বই প্রকাশিত গল্পের মাধ্যমে এর রহস্য নতুন করে সামনে উঠে আসে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে ঘিরে যেসব রহস্য প্রচলিত আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বারমুডা ট্রায়েঙ্গেলে প্রায়ই বড় বড় জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ জায়গার উপর দিয়ে কোন বিমান উড়ে গেলে তার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়না। এছাড়া বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল এলাকায় কম্পাসের কাঁটা এলোমেলো দিকনির্দেশনা দেয়।
১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে লেখা বেশ কিছু বইতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের নানা অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। সেসব ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয় যেমন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিমান ও জাহাজ গুলো মহাজাগতিক জীবের আক্রমণের শিকার হয় আবার কোথাও বলা হয় যেহেতু কম্পাস ঠিকমতো কাজ করে না তারমানে বারমুডার কোথাও শক্তিশালী বিশাল চুম্বক আছে যার প্রবল আকর্ষণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। কেউ কেউ আবার সেই এলাকার মধ্যে ওয়ার্ম হোলের অস্তিত্ব আছে বলেও মনে করেন যা জাহাজ ও বিমান গুলোকে টেনে নিয়ে যায় কিন্তু এসব বর্ণনার কোনোটিরই কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১৯৭৫ সালের ল্যারি কুশ (Larry Kusche) নামের এক গবেষক কয়েক বছরের সংবাদ পত্র ঘেটে এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সব দুর্ঘটনার খবর অনুসন্ধান করে বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল মিস্ট্রি সল্ভ (The Bermuda Triangle Mystery Solved) নামের একটি বই লেখেন। এই বইতে তিনি প্রমাণ করে দেখান যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের নামে যত রহস্য এবং তথ্য বর্ণনা করা হয়েছে তার সবই অতিরঞ্জিত সন্দেহমূলক অথবা প্রমাণ ছাড়া। এছাড়াও পত্রপত্রিকায় যেই জাহাজগুলোকে সম্পূর্ণ নিখোঁজ বলা হয়েছে সেসব জাহাজের দুর্ঘটনার বর্ণনা পরবর্তীতে পাওয়া গেছে অথবা জাহাজগুলোর উদ্ধারের খবর গণমাধ্যমে আর প্রকাশিত হয়নি। অনেক দুর্ঘটনা এই এলাকার আশেপাশে ঘটলেও বর্ণনার সময় সে গুলোকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ভেতরকার ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল আটলান্টিক মহাসাগরের বিষুবরেখা (Equator)-এর কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে ভৌগোলিকভাবেই এখানে নিয়মিত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় আর এসব ঝড়ের সাথে দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনা করলে সেটা যথেষ্ট বাস্তব-সম্মত বলেই মনে হয়।
এছাড়া কম্পাসের ভূল দিক নির্দেশণার ব্যাপারটি হলো পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরু এবং চৌম্বকীয় মেরুর পার্থক্য থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানেই কম্পাসের বিক্ষেপের ভিন্নতা দেখা যায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থানকালে-ও ভৌগোলিক এবং চৌম্বকীয় মেরুর অসামঞ্জস্যতার কারণে কম্পাস সঠিক দিকনির্দেশ করতে পারে না।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর রহস্যময়তার সুযোগে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের পুরনো জাহাজ বা বিমানগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বীমার টাকা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে আর বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর লিখিত বইয়ের লেখক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের প্রযোজকরা ইচ্ছাকৃতভাবে বারমুডা ট্রায়েঙ্গেল নিয়ে নানা বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছে কারণ ওই মিথ্যে রহস্যের উপর বই লিখে বা টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে তারা সহজেই প্রচুর অর্থ কামিয়েছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ত নৌ-পথ, সে হিসেবে এ অঞ্চলে যে পরিমাণ জাহাজ ও বিমান নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় খুব বেশি নয়। অতীতেও এই অঞ্চল দিয়ে বহু বাণিজ্য জাহাজ যাতায়াত করার কারণে এখানে প্রচুর জলদস্যুর আনাগোনা ছিল আর জলদস্যুরা বাণিজ্য জাহাজের লুটপাট করে সে গুলোকে ডুবিয়ে দিত ফলে অনেকেই মনে করত জাহাজগুলো অলৌকিক ভাবে হারিয়ে গিয়েছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে আপনার কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে তা আমাদের অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না, ধন্যবাদ।
No comments: