কিভাবে হল বিগ ব্যাং থিওরির উৎপত্তি | How Big Bang Theory Was Born

multi color image

ভ্রমান্ড সৃষ্টি নিয়ে অনেকের মনে অনেক কথা আছে কিন্তু যারা বিগ ব্যাং থিওরি (Big Bang Theory) বিশ্বাস করে তাদের মধ্যে তো এটা সবাই জানি যে, আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যার পরে তৈরি হয়েছে আমাদের এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড (Universe)। তখন এমন একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল যেটাকে আমরা বিগ ব্যাং (Big Bang) নামে চিনে থাকি। বিগ ব্যাং এর পরেই তৈরি হয় ঐ সমস্ত জিনিস যা আমরা আজ দেখছি অনুভব করছি আর ছুঁতে পারছি এবং ওই সমস্ত জিনিসও তখনই সৃষ্টি হয়েছিল যা আজ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি।

এখানে এসেই আমাদের মনে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন আসে যেমন বিগ ব্যাং কেন হলো? কিভাবে হলো? এবং এই বিগ ব্যাং কে ঘটিয়েছে এটার উত্তর আমাদের কাছে নেই আর না আমরা কখনো এটার উত্তর জানতে পারবো। 

এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক আছে কিন্তু আমাদের আজকের প্রশ্ন এটাই, আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এর জন্ম যে বিগ ব্যাং থেকেই হয়েছিল এটা আমরা কিভাবে জানতে পারলাম আর বিগ ব্যাং যে হয়েছিল তার কি প্রমাণ আছে বিজ্ঞানের কাছে, এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর-ই আজকে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। 

বিগ ব্যাং এর খোঁজ সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল ১৬০৮ সালে যখন একজন আই গ্লাস মেকার হ্যান্স লিপারসি (Hans Lippershey) এমন একটি জিনিসের আবিষ্কার করেন যেটা যেকোনো বস্তুকে তিন গুণ পর্যন্ত ম্যাগনিফাই (দূরে কোন বস্তুকে অতি সহজেই দেখতে সক্ষম) করতে পারতো আর এখান থেকেই শুরু হয় দূরবীন (Telescope) এর। এর এক বছর পর ১৬০৯ সালে ইতালিয়ান জ্যোতিষ বিজ্ঞানি (Astonomer) গ্যালিলিও গ্যালিলি (Galileo Galilei) তার প্রথম টেলিস্কোপ এর নির্মাণ করেন, আর এটা মানব ইতিহাসের সব থেকে বড় রচনার একটি। এটাই মানুষের সম্পূর্ণ ধ্যান ধারণার পরিবর্তন করে দেয় আর গ্যালিলিও গ্যালিলির এই মহান আবিষ্কারের জন্য তাকে ফাদার অফ টেলিস্কোপ বলা হয়ে থাকে। 

টেলিস্কোপের সাহায্যে মানুষ দূরে কোন বস্তুকে অতি সহজেই দেখতে সক্ষম হয়। যখন গ্যালিলিও এটা দেখে রাতের আকাশে কিছু তারা সত্যি অর্থে আসলে সেগুলো তারা নয় সেগুলো গ্রহ আর ওটাও আমাদের পৃথিবীর মতোই পরিক্রমা করছে কিন্তু পৃথিবী নয় সুর্যের যেটা তখনকার সময়ের ধর্ম প্রেমিদের কাছে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। গ্যালিলিও তখন বিজ্ঞানি কপার নিকাস (Copernicus) এর হ্যালিসেনট্রিক তত্ব (Heliocentric Theory)-কে সমর্থন করেণ আর বলেন সত্যি-অর্থে আমাদের পৃথিবী এই ইউনিভার্সের কেন্দ্র নয় বরং সূর্য আমাদের সৌরমন্ডলের কেন্দ্র। একথা শুনে তখনকার ধর্মাবলম্বীরা এটাকে মোটেও বিশ্বাস করেননি আর তার এই খোঁজের জন্য তাকে আজীবনের জন্য কারাবাস দেওয়া হয়। ১৬৪২ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায়ই গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যু হয় কিন্তু সত্য কখনো লুকিয়ে থাকেনি বরং সময়ের সাথে সাথে আরও আধুনিক হতে থাকে টেলিস্কোপ আর খোঁজ হতে শুরু করে নতুন নতুন সব গ্রহের। 

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি (Mount Wilson Observatory) আবিষ্কার হয় যেটা ঐ সময়কার সব থেকে উন্নতমানের অবজারভেটরি ছিল আর এটাকে তৈরি করেছিল আমেরিকান জ্যোতিষ বিজ্ঞানি জর্জ এলেরি হেল (George Ellery Hale)। জর্জ তার অবসারভেটরিতে তখনকার সময় সব থেকে বড় টেলিস্কোপটি লাগায় আর সেটা ছিল দ্যা ১০০ইঞ্চি টেলিস্কোপ। 

১৯১৭ তে যখন এই টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাকাশে চোখ রাখা হয় তখন বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যায়, তারা বুঝতেই পারছিলো না তারা কি দেখছে।

all galaxy in one image

তারা দেখে অদ্ভুত আলোর মেঘ গুলো, যেগুলো আলাদা আলাদা আকারের ছিল, কিছু ডিম্বাকার, কিছু সোজা ও কিছু বিন্দু অনিয়মিত আকারের আছে আর। তখন তাদের ধারণা অনুযায়ী সেগুলো নেবুলা ছিল কারণ ওই সময় তারা এটা জানতেন না সত্যিই এগুলো কি আর ওগুলো আমাদের থেকে কতটা দূরে আছে। এরপর হেল আমন্ত্রন করেন পৃথিবীর সব বড় বড় জোতিষবিদদের যেন তারা এই রহস্য থেকে পর্দা উঠাতে পারে আর ওইসব জোতিষবিদ এর মধ্যে একজন ছিলেন এডুইন হাবল (Edwin Hubble)। হাবল রাত জেগে জেগে ১০০ইঞ্চি টেলিস্কোপ এর সাহায্যে মহাকাশের ঐ-সমস্ত নেবুলার অধ্যান করতে থাকতো আর ঐ-সমস্ত নেবুলার মধ্যে একটি নেবুলা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে যেটার নাম অ্যান্ড্রমেডা নেবুলা।হাবল অ্যান্ড্রমেডা নেবুলাতে থাকা তারা দেখতে পেত কিন্তু অ্যান্ড্রমেডা যে আমাদের গ্যালাক্সির মতই একটি গ্যালাক্সি এটা প্রমাণ করার জন্য অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি (Andromeda Galaxy) আমাদের থেকে কত আলোকবর্ষ (Lightyears) দূরে আছে সেটার প্রমাণ প্রয়োজন ছিল। তখনকার সময়ে এটা প্রমান করা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার ছিল কিন্তু হাবল হার মানেননি, তিনি স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল ম্যাথ এর সাহায্যে অ্যান্ড্রোমেডার দূরত্বকে পরিমাপ করেন এবং এটা অনুমান করেন অ্যান্ড্রোমেডা আমাদের থেকে প্রায় ৮ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে আছে এর মানে এটাই বুঝাচ্ছে যে, অ্যান্ড্রোমেডা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি (Milky Way Galaxy)-এর বাইরে আছে। এটা অন্য একটি গ্যালাক্সি মানে নতুন আরেকটি দুনিয়া। 

এরপর হাবল আরো অনেক নতুন নতুন গ্যালাক্সির খোঁজ করেন। তিনি দেখেন আমাদের আশেপাশের সব গ্যালাক্সি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এর মানে ব্রহ্মাণ্ড বড় হচ্ছে বা ছড়িয়ে পড়ছে। হাবেলের এই খোজ থেকে বোঝা যায় আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড স্থির নয় এটা সবসময় বড় হচ্ছে বা ছড়িয়ে পড়ছে কিন্তু সত্যি অর্থে এটা কেন হচ্ছে এটার উত্তর তো আমরা জানি না কিন্তু হ্যাঁ ছড়িয়ে পড়া ব্রহ্মাণ্ড (Universe) থেকেই হাবেলের মনে একটি প্রশ্ন আসে যদি এই ইউনিভার্সের সবকিছু একে অপরের থেকে দূরে সরতে থাকে তার মানে কোন একটা সময় এমন ছিল যখন আমাদের ব্রহ্মান্ডের সবকিছুই একটি পয়েন্টে সংকুচিত ছিল আর এইখান থেকে জন্ম হয় বিগ ব্যাং থিওরির।

big-bang-scientific-theory-chart

বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে আমাদের এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্স প্রথমে একটি ক্ষুদ্র কণা যেটা প্রোটনের আকারে ছিল, তার মধ্যে একটি বিশাল বিষ্ফরণের সৃষ্টি হয় আর এই বিষ্ফরণের ফলেই জন্ম হয় আমাদের এই মহাবিশ্বের। 

আজকে আমরা জানলাম বিগ ব্যাং এর উৎপত্তি সম্বন্ধে, তো আশা করি আপনারা খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছেন কিভাবে বিগ ব্যাং থিওরির আবিস্কার হয়েছিল আর আমাদের আজকের আয়োজন যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আমাদের পোষ্টটি অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না আর বিগ ব্যাং সম্পন্ধে আপনার কোন মতামত থাকলে আমাদের অবশ্যই জানাবেন, ধন্যবাদ।

No comments:

Powered by Blogger.