পদ্মা সেতু কিভাবে তৈরী হচ্ছে? | এক নজরে পদ্মা সেতু | The Padma Bridge Construction

পদ্মা সেতু তৈরির দৃশ্য, The-Padma-Bridge-Construction

বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীর নাম পদ্মা নদী (Padma River)। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ-কে উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে পৃথক করেছে এই নদী। পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ টি জেলার মানুষের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে আর সেইসাথে পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতিতে নিয়ে আসবে অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবর্তন। 

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। পদ্মা সেতু কিভাবে তৈরি হচ্ছে তা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। 

বর্তমান ও টানা ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেতু নির্মাণের জন্য শুরুতে বিশ্বব্যাংক (The World Bank) পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখায় এবং ২০১১ সালে এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে কিন্তু পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুলাই মাসে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় বিশ্বব্যাংক। এরপর বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়ণ ও ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা করেন। 

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরাহয় ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। 

সর্বপ্রথম ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় আর বিশ্ব ব্যাংক-কে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ করেই ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

পদ্মা সেতু মূলত দুই তলা বিশিষ্ট সেতু, এর উপরের তলায় থাকবে ৪ লেনের সড়ক পথ এবং নিচের তলায় থাকবে একটি একক রেলপথ। এছাড়াও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহনের সুবিধাও এই সেতুতে রাখা হয়েছে। 

পদ্মা সেতু দৈর্ঘে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার আর প্রস্থে ৫৯ দশমিক ৪ ফুট। মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পরপর ৪২টি পিলার ৪১ টি স্প্যানের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ হবে এই সেতু এবং ৪২টি পিলারের প্রতিটি পিলারে থাকবে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল। 

পদ্মা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন নদী হওয়ায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং তাই এ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

কাজগুলো হলো:- মূল সেতু নির্মাণ, নদী শাসন, দুই পারের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, টোল প্লাজা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। 

মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (China Major Bridge Engineering Company Ltd) আর নদী শাসনের কাজ করছে চায়নার আরো একটি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন (Sinohydro Corporation Limited)। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেললাইন নির্মাণে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান ক্যানারেল (Canarail) এর নেতৃত্বে একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে আর পুরো প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে (Korea Expressway Corporation) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army)। 

পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালী তবে রাতের বেলায় সেতুতে জলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। মংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর এর সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ করবে এই সেতু এর ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে বাড়বে কর্মসংস্থান। ধারণা করাহয় প্রতি বছর দেশের মোট দেশীয় পণ্য উৎপাদন (G.D.P.) বাড়তে থাকবে ১.২ শতাংশ হারে। 

আশাকরি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন ও ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে আর এত বিতর্ক ও বাধা পেরিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ণ ও ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরবে।

No comments:

Powered by Blogger.