সমাজ সমালোচক চার্লস ডিকেন্স | Charles Dickens Biography

Charles-Dickens

ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ উপন্যাসিক ও সমাজ সমালোচক চার্লস ডিকেন্স ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিশু অধিকার, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার নিয়ে কাজ করেছেন। তার উপন্যাসে ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের চমৎকার চিত্র পাওয়া যায়। তিনি জীবদ্দশাতেই জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন এবং মৃত্যুর পরও তার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রয়েছে।

চার্লস ডিকেন্স এর পুরো নাম চার্লস জন হাফ্যাম ডিকেন্স। তার বাবার নাম জন ডিকেন্স ও মায়ের নাম এলিজাবেথ নিবারো। ডিকেন্সের শৈশব কাটে কেন্টের চাতামে শহরে। তিনি চাতামের উইলিয়াম গিলস স্কুলে লেখাপড়া করেন। এরপর তারা চলে যান কেন্টের ক্যামডেনে। 

সেখানের ওয়েলিংটন হাউস একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন চার্লস। কিন্তু নিয়মানুবর্তিতা ও শিক্ষকদের নির্মম আচরণের জন্য তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। 

১৮২৭ সালের মে মাসে হলবোর্ন কোর্টে জুনিয়র কেরানি হিসেবে চাকরি নেন ডিকেন্স। ১৮২৮ সালের নভেম্বরে শুরু করেন সাংবাদিকতায় পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ। ১৮৩৪ সাল থেকে মর্নিং ক্রনিকল পত্রিকার মাধ্যমে শুরু করেন সাংবাদিকতার চাকরি, পরে ‘হাউস হোল্ড ওয়ার্ড’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হন। ১৮৩৬ সালে চার্লস ক্যাথেরিন থমসন হগার্থকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তানসংখ্যা ছিল ১০।

ডিকেন্সের ১৮৩৩ সালে লেখা প্রথম গল্পের শিরোনাম ‘আ ডিনার অ্যাট পপুলার ওয়ার্ক’, ছাপা হয় লন্ডনের মান্থলি ম্যাগাজিনে। ১৮৩৬ সালের মার্চ থেকে শুরু করেন ধারাবাহিক উপন্যাস ‘দ্য পিকউইক পেপারস’। এ উপন্যাসে স্যাটায়ার ও সমাজকে দেখার সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সাহিত্যিকের স্বীকৃতি এনে দেয়। এরপর একের পর এক লিখেন বিখ্যাত সব বই। সে সব গল্পের অধিকাংশেরই প্রেরণা তার বেড়ে ওঠার দিনগুলো। লিখেছেন ১৫টি উপন্যাস, ৫টি উপন্যাসিকা, শতাধিক ছোটগল্প ও অন্য বিষয়ে অনেক প্রবন্ধ। তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হল— স্কেচেস বাই বজ, দ্য ওল্ড কিউরিওসিটি শপ, অলিভার টুইস্ট, নিকোলাস নিকোলবি, বার্নাবি রাজ, আ ক্রিসমাস ক্যারোল, মার্টিন চাজলউইট, আ টেল অব টু সিটিজ, ডেভিড কপারফিল্ড, দ্য গ্রেট এক্সপেকটেশন, ব্ল্যাক হাউস, লিটল ডরিট, হার্ড টাইমস ইত্যাদি। তার অনেক উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বেশির ভাগ উপন্যাসই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। 

চালর্স ডিকেন্সের বেশির ভাগ লেখা পত্রিকায় মাসিক কিস্তিতে প্রকাশিত হতো। যা তার বইকে জনপ্রিয় করে তোলে। একটি কিস্তি প্রকাশের পর পরবর্তী অধ্যায়গুলো রচনা করতেন। এর জন্য তিনি পাঠকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতেন, সেভাবে পরের কিস্তি লিখতেন। অধ্যায়গুলোর শেষটুকু হতো রহস্যময়, যার জন্য পাঠকরা পরবর্তী কিস্তিটি পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকত। 

বাস্তবতা, রসবোধ, গদ্যসৌকর্য, চরিত্রচিত্রণের দক্ষতা ও সমাজ চেতনার জন্য লিও টলস্টয়, জর্জ অরওয়েল, জিকে চেস্টারটনসহ অনেকে ডিকেন্সের লেখার উচ্চ প্রশংসা করেন। অন্যদিকে ভাবপ্রবণতা ও অবাস্তব কল্পনার অভিযোগ আনেন হেনরি জেমস, ভার্জিনিয়া উলফসহ অনেকে। 

চালর্স ডিকেন্স ১৮৭০ সালের ৯ জুন ইংল্যান্ডের হাইহ্যামে মারা যান।

No comments:

Powered by Blogger.