প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করা সর্বপ্রথম বিধ্বংসী ট্যাংক । Tank used in World War-I

বিধ্বংসী ট্যাংক, War Tank


ট্যাংক (Tank) শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে বিশাল এক লৌহদানবের ছবি ভেসে ওঠে। যুদ্ধের ময়দানে এই সাঁজোয়া যানটি প্রতিপক্ষের কাছে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত রূপে আবির্ভাব হয়। লোহার চেইনের ওপর ভর করে চলা এই যুদ্ধযানটি আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (World War-I) ১৯১৬ সালে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ ট্যাংক ব্যবহার করে ব্রিটিশরা। তারপর থেকে ধাপে ধাপে ট্যাংকের উন্নয়ন প্রযুক্তি অনেক সাধিত হয়েছে এবং যুক্ত হয়েছে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী ট্যাংক। 

আধুনিক কালে পঁয়ষট্টির পাক-বাংলার যুদ্ধ, আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ থেকে শুরু করে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক অভিযান সহ সব ক্ষেত্রেই ট্যাংক ছিল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমান শতাব্দীতে একটি সামরিক বাহিনী ট্যাংক ছাড়া অসম্পূর্ণ। ভবিষ্যতে ট্যাংক আরও আধুনিক হবে, হয়তো বদলে যাবে এর চিরচেনা রূপ, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক আগের মতোই বিভীষিকা রূপে আবির্ভূত হবে। আজকে জানাবো ইতিহাসের সর্বপ্রথম ভয়ানক ও বিধ্বংসী ট্যাংক এর কথা। 

প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংকের ব্যবহার করা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। যা “ব্যাটল অভ কামব্রেই (Battle of Cambrai-1917)” নামে পরিচিত ব্রিটিশ বনাম জার্মানদের এক যুদ্ধে প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। প্রায় ৩৭৬ এর কাছাকাছি সংখ্যক মার্ক-৪ (Mark IV) সিরিজের ট্যাংক ব্যবহার করে ব্রিটিশরা। ১৯১৭ সালের অগাস্ট মাসের প্রথম দিকে আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করে ব্রিটিশ সেনারা। ট্যাংক কোরের সেকেন্ড জেনারেল স্টাফ অফিসার জে. এফ. সি. ফুলার (J. F. C. Fuller) এবং জেনারেল স্টাফ অফিসার এইচ. জে. এলিস প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক ব্যবহারের কথা চিন্তা করেন। 

ব্রিটিশ বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল ট্যাংক দিয়ে আক্রমণ করে জার্মান হিন্ডেনবার্গ লাইন ধ্বংস করে দেওয়া। এই লাইনটি ছিল ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে জার্মান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাই পয়েন্ট। হিন্ডেনবার্গ লাইনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে শুধু পদাতিক বাহিনী দিয়ে এটি জয় করা প্রায় অসম্ভব ছিল। ব্রিটিশ থার্ড আর্মি'র জেনারেল জুলিয়ান বিং (Julian Byng)-এর অধীনে আক্রমণ পরিচালিত হয়। প্রায় ২,৫০,০০০ বৃটিশ সৈন্য প্রথমবারের মতো হিন্ডেনবার্গ লাইন ভেদ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ৫,০০,০০০ জার্মান সেনার মুখোমুখি হয়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন, পঞ্চম অশ্বারোহী বাহিনী ডিভিশন এবং তিনটি ট্যাংক ব্রিগেড নভেম্বরের ২০ তারিখ, সকালবেলা আচমকা হানা দেয় হিন্ডেনবার্গ লাইনের জার্মান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর। উদ্দেশ্য ছিল তারকাঁটা ভেদ করে জার্মান এরিয়ায় ঢুকে পড়া আর পদাতিক সৈনিকদের কাভার দেওয়া। 

শুরুতে প্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করে ব্রিটিশ বাহিনী। হঠাৎ আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় জার্মানরা। রাতের মধ্যে ব্রিটিশ বাহিনী দুই-তিন মাইলের মতো জায়গা দখল করে নেয়। পরবর্তী নয় দিন ধরে সামনের দিকে এগোতে থাকে ব্রিটিশ ট্যাংকবহর। প্রায় ১০ কিলোমিটারের মতো অঞ্চল হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে নভেম্বরের ৩০ তারিখ সফল প্রতিআক্রমণ চালায় জার্মান সেনাবাহিনী। জেনারেল জর্জ ভন মারউইৎজ (Georg von der Marwitz) এর অধীনে জার্মান রিজার্ভ ফোর্স 'ব্লিৎজক্রিগ' (জার্মান সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ যুদ্ধকৌশল) কৌশল অবলম্বন করে হারানো প্রায় সব অঞ্চল পুনর্দখল করে নেয়। জার্মান প্রতিঘাত সহ্য করতে না পেরে ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখের মধ্যে ব্রিটিশ ফোর্স পিছু হটতে হটতে আবারও তাদের আগের অবস্থানে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নেহায়েত কম ছিল না। দু'পক্ষেরই প্রায় ৪৫,০০০ করে সৈন্য খরচের খাতায় চলে যায় এবং ট্যাংক ও আর্টিলারি সমন্বিত এই যুদ্ধ ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংকের ভূমিকা কতটা প্রয়োজনীয় ও ভয়াবহ হতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। 

আমাদের আজকের আয়োজন আপনার কেমন লাগলো তা আমাদের অবশ্যই জানাতে ভূলবেন না এবং পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।

No comments:

Powered by Blogger.