অন্ধকার বলতে কি কিছু আছে? কি বলছে বিজ্ঞান? । What is Darkness in Bangla
আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে অন্ধকার, মানে আজকে আমরা অন্ধকারের সম্পর্কে জানবো। অন্ধকার বলতে কিছু আছে কি নেই, এই প্রশ্নটা শুনে অনেকে হয়তো মনে মনে ভাবছেন আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড (Universe) তো অন্ধকার, তাহলে আমরা এরকম কেন প্রশ্ন করছি?
অন্ধকার বলে কিছু আছে কি নেই, এই প্রশ্নের উত্তর, জানার জন্য নয়, বোঝার জন্য আমাদের আজকের পোষ্টটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
অন্ধকার, যেটা আলোর বিপরীত। আমাদের সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডের ৯০ থেকে ৯৫% এর মত স্থান সম্পূর্ণ অন্ধকার হলেও এই অন্ধকার কে বোঝার এবং খোঁজার জন্য আমাদের এই ইউনিভার্সের মাত্র ৫ থেকে ১০% আলোর সাহায্য নিতেই হবে। এই ৫ থেকে ১০% আলো আর ৯০ থেকে ৯৫% অন্ধকার যেটাই বলিনা কেন এই সব কিছু দেখার জন্য যেটার প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আমাদের চোখ।
যখন কোন বস্তুর ওপর থেকে আলোর কণা প্রতিফলিত হয়ে ফেরৎ এসে আমাদের চোখে আঘাত করে, তখনই আমরা সেটাকে দেখতে পাই। আমাদের চোখে যে আলো এসে পড়ে সেটা বিশ্বব্রহ্মান্ডে থাকা বিশাল একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন খুব মারাত্মক এবং খুব ভালোও হতে পারে। আমরা জানি আলো একটি নির্দিষ্ট গতি বা ওয়েভ (Wave/তরঙ্গ)-এ চলা ফেরা করে। এই ওয়েভ এর কিছু নির্দিষ্ট প্যাটারর্ন আছে আর আমাদের প্রধান সমস্যা এটাতেই কারণ আমরা সব কিছু দেখতে পাই না। যদি এই দেখা না দেখাকে আরো বিস্তারিত ভাবে বলি তাহলে বলবো যে, বিজ্ঞান বলে আমাদের চোখ এই ব্রহ্মান্ডের বিশাল রেডিয়েশনের একটি ক্ষুদ্র অংশকেই দেখতে পারে, মানে আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতা খুবই ছোট। এটাকে বোঝানো জন্য কিছু উদাহরণ দেই-
যেমন মনে করুন আমরা একটি পাখি কে যেভাবে অনেক রঙের সমন্বয়ে রঙিন ভাবে দেখি, কিন্তু একটি বিড়াল সেই পাখিকে আমাদের মতো দেখতে পারেনা কারণ বিড়ালের ওই ধরণের কোষ নেই যেমনটা আমাদের আছে, এর মানে আমরা মানুষ এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের যেই রং দেখে থাকি তা শুধু আমাদের নিজেদের কোষ এবং মস্তিষ্কের তৈরি করা। যেটা আমাদের পৃথিবীর অন্যসব প্রাণিদের থেকে আলাদা।
উপরের অংশে খুব সহজেই বিড়াল-কে নিয়ে একটি উদাহরণ দিলাম কিন্ত আমরা যে জিনিসটা পারিনা সেটা বিড়াল কিন্তু খুব সহজেই পারে আর সেটা হল অন্ধকারে দেখতে পারা, এর মানে বিড়ালের ভেতরে অন্ধকারে দেখতে পাওয়ার কোষ আছে যা আমাদের মধ্যে নেই।
আমরা যখন কোন কিছুকে দেখার কথা বলি তখন সেটা হচ্ছে আমাদের চোখের দৃষ্টি উপলব্ধি (Vision Perception)।
মনে করুন সূর্যের আলো যখন আমাদের ওপরে পরে, সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়, সেই প্রতিবিম্ব গুলোকে আমাদের চোখ আমাদের মস্তিষ্কে থাকা নিউরনের মাধ্যমে কোষ-কে প্রদান করে, তারপর মস্তিষ্ক আমাদেরকে বলে দেয় আমরা কি দেখছি আর এভাবেই আমরা সকল কিছু দেখতে পাই বা উফলব্ধি করতে পারি।
আলোর আরও কিছু বিষয় আছে, আলো বিভিন্ন ওয়েভ (Wave/তরঙ্গ)-এ চলাফেরা করে কিন্তু শুধু একটি নির্দিষ্ট ওয়েভ এর আলোকেই আমরা দেখতে পারি, বাকিগুলোকে আমরা মোটেও দেখতে পাই না, যেমন- এক্সরে, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, গামা রে ইত্যাদি এরকম অনেক রকমের আলোকরশ্মি আছে যা আমাদের এই সাধারণ চোখ দেখতে পারে না। আমরা যেমন আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা হারকে খালি চোখে দেখতে পাই না কিন্তু, যদি আমাদের চোখ এক্সরের সম্বোধনশীল হত তাহলে আমরা ঠিকই দেখতে পারতাম।
উপরের ছটিটিতে ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখুন। এখানে অনেকগুলো ছবি আছে আর এই সবগুলো ছবিই আমাদের পৃথিবীর কিন্তু আমরা এর মধ্যে শুধু একটি মাত্র ছবিকেই চিনতে পারছি কারণ এটাকে আমরা খালি চোখে দেখতে পারি আর বাকিগুলোকে অন্যান্য আলোর ওয়েভ এর মধ্যে দিয়ে দেখলে এরকম দেখা যায়।
১নং ছবিটি ইনফ্রারেড তরঙ্গ (Infrared Wave)-এর মাধ্যমে নাওয়া যেটার ছবি আমাদের পৃথিবীর ভেতরের গরমের কারণে এরকম দেখাচ্ছে।
২নং ছবিটিকে আল্ট্রাভায়োলেট (Ultraviolet) রশ্মি দ্বারা দেখা যাচ্ছে।
৩নং ছবিটি এক্সরে দ্বারা তোলা ছবি যা দ্বারা আমাদের মেরু অঞ্চলের চুম্বক শক্তিকে দেখা যাচ্ছে।
৪নং ছবিটি গামা রে রেডিয়েশন দিয়ে তোলা ছবি। এটাতে দেখা যাচ্ছে একটি সাদা স্তর, যেটা আমাদেরকে মহাবিশ্ব থেকে আশা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গামা রে রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করছে।
আমাদের ধারণা মতে, এই পৃথিবীতে আমরা যা দেখি তা ছাড়া বা তার বাইরে যে আর কিছুই নেই, কিন্তু বিজ্ঞানিক ভাবে আমাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ধরুন যদি কোন প্রাণী বা বস্তুকে শুধুমাত্র এক্সরে ওয়েভের মাধ্যমেই দেখা যায় তাহলে সেটা আমাদের এই সাধারণ চোখ ধরতে পারবে না, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে সেই বস্তু বা প্রাণীটি নেই। এখানের এই ক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন ভুত, আত্মা বা জিনের কথা যে এগুলো-ও তো খালি চোখে দেখা যায় না, তাহলে তারা কি অন্য কোন ওয়েভে চলাফেরা করে, তাহলে বলা যেতে পারে হয়ত বা করে, তবে নিশ্চিত ভাবে ধরা যেতে পারে এই মহাবিশ্বে এরকম অনেক কিছুই আছে যেগুলোকে আমাদের এই সাধারণ চোখ দেখতে পায় না।
বিজ্ঞানিরা এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা করছেন, যেন আমাদের দৃষ্টিসীমা আরো বিস্তার হতে পারে। বিজ্ঞানের ধারনামতে আমরা বুঝতে পারলাম এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে অনেক কিছুই আছে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। বিড়াল আলো এবং অন্ধকারে দেখতে পারে, কিন্তু আমরা পাই না। এটা হচ্ছে আমাদের সীমাবদ্ধতা, কিন্তু বিড়ালের কাছে এই সীমাবদ্ধতা নেই, এর জন্য তারা দিন এবং রাত উভয় সময়েই দেখতে পারে এবং তাদের কোন প্রকার সমস্যাও হয় না।
যদি আমরা রাতের বেলায় কোন প্রকার সমস্যা ছাড়া দেখতে পারতাম তাহলে আমরা কি বলতাম অন্ধকারকে, হয়তো এটাই বলতাম, দিনের বেলায় আমরা একটু বেশি দেখতে পারি আর রাত্রেবেলা একটু কম, আর যদি আমাদের চোখে রাত্রে বেলায় দেখতে পাওয়ার কোষ অনেক বেশি হতো তাহলে হয়তো আমরা দিনের বেলাতেই কম দেখতে পারতাম আর রাতের বেলাতেই বেশি। সর্বশেষ আমরা বিজ্ঞানিক ভাবে এটাই বুঝতে পারি যে, আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতার কারণেই দিন ও রাতের সৃষ্টি হয়েছে, যেটাকে আমরা অন্ধকার বা (Dark) বলে থাকি।
আমাদের আজকের পোষ্টটি আপনার কেমন লাগলো তা আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আর পোষ্টটি যদি ভাল লেগেথাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।
No comments: