কখনো ডুবেনি টাইটানিক জাহাজ (RMS Titanic Ship Mystery), ১০০% তথ্য সহকারে রহস্য ফাঁস
টাইটানিক (Titanic) জাহাজ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় মনুষ্য নির্মিত ভাসমান যান যেটা তার প্রথম যাত্রাতেই উত্তর আটলান্টিক সাগরের এক বিশাল হিমশৈলি (Iceberg)-এর সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত বিষয় টাইটানিক (Titanic) ডুবি কি সত্যিই একটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত অপরাধ তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
টাইটানিকের মালিকানা প্রতিষ্ঠার হোয়াইট স্টার লাইন (White Star Line) তাদের পুরনো জাহাজ এর জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ধাপ্পাবাজির আশ্রয় নেয়।
হোয়াইট স্টার লাইনের ছিল হুবহু একই রকম দেখতে দুইটি জাহাজ যার একটির নাম অলিম্পিক এবং অন্যটির নাম টাইটানিক। তারা টাইটানিক এর নাম করে অলিম্পিক জাহাজটি আটলান্টিক সাগরে ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দিয়েছিল, আর তাই টাইটানিক জাহাজ কখনোই ডুবেনি, ডুবেছিল অলিম্পিক।
এত বড় অপরাধযুক্ত কাজটি তারা কিভাবে করেছিল এবং তারা যে সত্যিই এই অপরাধটি করেছিল তাই আজকে ১০০% তথ্য সহকারে আপনাদেরকে জানাবো।
টাইটানিকের মালিকানা প্রাতিষ্ঠান হোয়াইট স্টার লাইন ১৯০৭ সালে তিনটি বিলাশবহুল সুপারলাইনার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে নির্মাণ করা হয় অলিম্পিক এরপর টাইটানিক এবং সব শেষে ব্রিটানিক। ১৯১১ সালের ১৪ জুন অলিম্পিক তার প্রথম যাত্রা করে, একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অলিম্পিক তার পঞ্চম যাত্রায় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচ.এম.এস হক (HMS Hawke) এর সাথে ধাক্কা লেগে অলিম্পিকের নিচের দিকে দুটি ছিদ্র হয়ে যায়, তখন হোয়াইট স্টার লাইন অলিম্পিকের মেরামতের জন্য বীমা কোম্পানির কাছে বিমার টাকা দাবি করে কিন্তু অলিম্পিকের এই দুর্ঘটনার কারণে অলিম্পিক-কে বিমার অযোগ্য ঘোষণা করে বীমা কোম্পানি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় আর অন্যদিকে আরেকটি বিশাল জাহাজ নির্মাণাধীন থাকায় হোয়াইট স্টার লাইন ছিল দেউলিয়া হবার পথে।
তাদের বিলাসবহুল টাইটানিক নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করেন তৎকালীন আমেরিকার কুখ্যাত বিনিয়োগকারী জেপি মরগান (J. P. Morgan) আর এদিকে হোয়াইট স্টার লাইনের ব্রুস ইজমি (J. Bruce Ismay) ও ছিল অত্যন্ত কঠর ও কুট ব্যবসায়ী। তারা দুজনেই বিমা জালিয়াতি করার পরিকল্পনা শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ অলিম্পিকের জন্য টাকা না দিলেও নতুন জাহাজ টাইটানিক ডুবে গেলে বিমা কোম্পানী সম্পূর্ণ টাকা দিতে বাধ্য। তারা চিন্তা করে যদি অলিম্পিক জাহাজের নাম বদলে টাইটানিক রাখা হয় আর টাইটানিক নামধারী পুরনো জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া হয় তাহলেই তার পুরো টাকাটা পেয়ে যাবে। দুই ব্যবসায়ী মিলে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অলিম্পিক-কে সাউথার্ন বন্দর (Southern Port)-এ কোনরকমে চলার উপযোগী করে এর পূর্ণাঙ্গ মেরামতের জন্য বেলফাস্ট করে নিয়ে আসা হয়। তখন বেলফাস্টে টাইটানিকের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। অলিম্পিক ও টাইটানিক ভেতরটা বাহির থেকে দেখতে হুবহু একইরকম। পাশাপাশি রাখা অবস্থায় সাধারণ লোকের পক্ষে বলা কিছুতেই সম্ভব না কোনটা অলিম্পিক আর কোনটা টাইটানিক।
১৯১২ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে টাইটানিক ও অলিম্পিক শেষবারের মতো পাশাপাশি রাখা হয় আর সেই সুযোগেই ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হাত সাফাইয়ের কাজটি। আয়তনে প্রায় তিনটি ফুটবল মাঠের মত বড় জাহাজকে বদলে ফেলা হয় মাত্র এক রাতের ব্যবধানে।
হোয়াইট স্টার লাইন দাবিকরে ১৯১২ সালের মার্চের ৭ তারিখে অলিম্পিক মেরামতের কাজ শেষ করে বেলফাস্ট ত্যাগ করে কিন্তু এটিই মূলত নতুন জাহাজ টাইটানিক। পুরোন জাহাজ অলিম্পিকের নাম ধারণ করে বন্দর থেকে বেরিয়ে আসে, তার ঠিক তিন সপ্তাহ পরে পুরনো জাহাজ অলিম্পিক নতুন টাইটানিক নাম ধারণ করে এর প্রথম যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
বিঃদ্রঃ এই মুহূর্ত থেকে বর্ণনার খাতিরে যতবারই টাইটানিকের কথা বলা হবে ততবার ই ধরে নিতে হবে সেটি মূলত পুরনো জাহাজ অলিম্পিক।
টাইটানিক এর প্রথম যাত্রার জন্য বেলফাস্ট থেকে নিয়ে আসার পর টাইটানিকের বহু কর্মী কাজে ইস্তেফা দিয়ে জাহাজ থেকে নেমে যায়। সে সময় বৃটেনে চলছিলো জাতীয় কয়লা ধর্মঘট, কয়লা ধর্মঘটের কারণে বহু জাহাজ বন্দরে আটকে ছিল আর হাজার হাজার নাবিকের তখন কোনো কাজ ছিল না কিন্তু সেই আকালের সময় টাইটানিকের কর্মীরা কেন চাকরি ছেড়ে চলে গেল কারণ তারা জানতে পেরেছিল আর কয়েক দিনের মধ্যেই জাহাজটি কে ডুবিয়ে দেয়া হবে। আরো সন্দেহের বিষয় হল যাত্রা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে জাহাজের মালিক জেপি মরগান সহ টাইটানিকের ৫৫ জন প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের যাত্রা বাতিল করে অথচ টাইটানিক তৈরির সময় জেপি মরগান নিজেই জনসম্মুখে ঘোষণা করেছিল টাইটানিকের প্রথম যাত্রায় সে অবশ্যই সফর করবে
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল তিন ভাগের মাত্র দুই ভাগ যাত্রী নিয়ে টাইটানিক তার সাউথার্ন বন্দর থেকে নিউইয়র্ক এর উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রা করে। যে জাহাজের প্রথম যাত্রায় ভ্রমণ করতে পারাটা এক অভিজাত্যের বিষয় ছিল কিন্তু তাতে হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটল যে যাত্রীরা তাদের যাত্রা বাতিল করলো।
টাইটানিকের মালিকরা চিন্তায় ছিল যখন তারা টাইটানিক ডুবিয়ে দিবে তখন এতগুলো যাত্রীর কি হবে সেজন্য তারা একটি উদ্ধারকারী জাহাজ তৈরি রাখার পরিকল্পনা করে।
জেপি মরগান এর আরো একটি পণ্যবাহী জাহাজ হলো ক্যালিফোর্নিয়ান (SS Californian)। ক্যালিফর্নিয়ান জাহাজটিও তখন ব্রিটেনের কয়লা ধর্মঘটের কারণে লন্ডন বন্দরে আটকে ছিল কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই রহস্যজনকভাবে ক্যালিফোর্নিয়ান কয়লা ছাড়াই বন্দর ত্যাগ করে আমেরিকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেই মুহূর্তে ক্যালিফোর্নিয়ান-এ যে পরিমাণ কয়লা ছিল তাতে তাদের কিছুতেই আমেরিকায় পৌঁছানো সম্ভব ছিল না তাছাড়া বন্দর ছাড়ার মুহূর্তে জাহাজটিতে কোন মালামাল বা যাত্রী কোন কিছুই ছিল না, পুরোপুরি ফাঁকা এই জাহাজটিতে তখন ছিল শুধুমাত্র ৩ হাজার কম্বল ও শীতবস্ত্র। টাইটানিক ডুবে গেলে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ এ যা থাকা দরকার এবং যে পরিমান দরকার ঠিক তাই। ক্যালিফোর্নিয়ান পূর্ণ গতিতে আটলান্টিকে ছুটতে থাকে এবং হঠাৎ করেই ১৪ এপ্রিল সাগরে গিয়ে ক্যাপ্টেন এর নির্দেশে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়।
টাইটানিক যাত্রা শুরু করার পর একই পথ দিয়ে যাওয়া পূর্ববর্তী একাধিক জাহাজ টাইটানিক এর সামনে থাকা হিমশৈলের সংকেত পাঠিয়েছে কিন্তু তাতে টাইটানিক এর গতি একটুও কমেনি তাছাড়া হিমশৈলের সামনে পড়লে এমনকি রাতের বেলায়ও যেকোনো জাহাজের পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে তা সহজেই দেখা যায়। পরবর্তীতে দুর্ঘটনার অনুসন্ধানের সময় জাহাজের সেকেন্ড অফিসার বলেন সে রাতে ডিউটি শেষ করে যাবার সময় তিনি প্রায় দেড় থেকে দুই মাইল দূরে হিমশৈল দেখতে পান। তিনি মনে করেন জাহাজটি ঘুরিয়ে সংঘর্ষ এড়ানোর মতো যথেষ্ট সময় ছিল তাই তিনি বিষয়টি কন্ট্রোল রুম কে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।
১৪ এপ্রিল রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে টাইটানিক হিমশৈলের ধাক্কা খাওয়ার সাথে সাথে টাইটানিকের তলার পাঁচটি কম্পার্টমেন্ট একেবারে ভেঙে যায়। হোয়াইট স্টার লাইনের পরিকল্পনামতো টাইটানিকের ক্যাপ্টেন দুর্ঘটনার নাটক সাজাতে গিয়ে সত্যি সত্যিই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। অপরিকল্পিত এই দুর্ঘটনায় ক্যাপ্টেন হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন কারণ সাধারণত এ ধরনের আপদকালীন পরিস্থিতি তে একটি জাহাজের যা যা করণীয় টাইটানিক তার কোনটিই গ্রহণ করেনি। হিমশৈলের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর ক্যাপ্টেন জাহাজের ইঞ্জিন ঘুরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় যাতে করে হিমশৈলের সাথে জাহাজের আরো বেশি করে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয় আর আলামত দেখে মনে হয় তারা চাইছিল জাহাজটি ডুবে যাক, জাহাজটাকে বাঁচানোর তারা কোন চেষ্টাই করেনি। হিমশৈলের সাথে ধাক্কা লাগার দীর্ঘ ৩৫ মিনিট পর টাইটানিক তাকে উদ্ধারের জন্য বার্তা পাঠায় অথচ আধা ঘন্টা সময়েই একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট এছাড়া ডুবতে শুরু করার ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট পর প্রথম লাইভ বোর্ড জাহাজ থেকে ছাড়া হয়। এমনিতেই জাহাজে থাকা লাইভ বোর্ডের ব্যবস্থা ছিল মাত্র অর্ধেক লোকের জন্য তারপরও যে কয়েকটি লাইফ বোর্ড ছাড়া হয়েছে তার অধিকাংশই পুরোপুরি ভর্তি না করেই ছেড়ে দেয়া হয় এর কারণ হলো ক্যালিফোর্নিয়ানের উদ্ধারের আশায় টাইটানিকের ক্যাপ্টেন অপেক্ষা করছিল, কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ান টাইটানিক এর আশেপাশে থাকলেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একজন যাত্রীর-ও জীবন রক্ষা করতে পারেনি। রাত ২টার মধ্যে পুরো জাহাজটি দুই ভাগ হয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়, সেই সাথে প্রায় দেড় হাজার যাত্রীও ডুবে যায় আটলান্টিকের বরফ-শীতল জলে। লাইফ বোর্ড-এ থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা হয় পরদিন সকাল বেলা।
দুর্ঘটনার এক মাস পর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে যেসব নাবিক ইংল্যান্ডে ফিরে আসে তাদের স্বজনদের সাথে প্রথমেই দেখা করতে না দিয়ে প্রায় ২৪ ঘন্টা এক প্রকার আটকে রাখা হয়। সে সময় হোয়াইট স্টার লাইন এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা জীবিত ফিরে আসা কর্মীদের কে হুমকি দেয় তারা টাইটানিক সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে তাদের পরিণত হবে জাহাজের মত। এদিকে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে তৎকালীন বৃটিশ সরকার ঠিকঠাক তদন্ত না করেই এক প্রকার ধামাচাপা দিয়ে দেয় টাইটানিকের সকল খবরা-খবর।
এভাবেই টাইটানিক নাম ধারণ করে অলিম্পিক জাহাজ আটলান্টিক সাগরের তলায় ডুবে আছে আর অন্যদিকে প্রকৃত টাইটানিক অলিম্পিক নাম ধারণ করে ১৯৩৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরো দীর্ঘ ২৫ বছর সম্পূর্ণ সচল থেকে তার পর অবসর গ্রহণ করে। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ হকের সাথে ধাক্কা লাগার পরও অলিম্পিকের এত দীর্ঘ বছর সচল থাকা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলনা।
টাইটানিক ছাড়াও বহু জাহাজ মালিক তাদের পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র বিমা কোম্পানির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে। আটলান্টিক মহাসাগরের নির্দিষ্ট একটি এলাকার মধ্যে বহু জাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দিয়ে সে এলাকায় অতিপ্রাকৃতিক কোন বিষয় আছে বলে গুজব ছড়ানো হয়।
টাইটানিক জাহাজ নিয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না, ধন্যবাদ।
এগুলো কি আসলেই সত্যি...?
ReplyDelete